জীবনী

SUFI SADAR UDDIN AHMAD CHISTY (A:)
সূফী সদর উদ্দিন আহ্‌মদ চিশ্‌তী (আঃ)

Arrival of great Godhead mawla Sadar Uddin Ahmad Chisty (A:) is on 22nd September 1914, 7th Ashwin 1321 Bangla, Father: Kazim Uddin Ahmad and Mother: Yaron Nessa in the village Chunkutia, keraniganj, Dhaka. After 92 Years on the same date 22nd September 2006, 7 Ashwin 1413 Bangla, departed from this mundane world. His secondary education in Dhaka Government Muslim high school. Higher secondary from Jagannath College Dhaka and graduation from Dhaka University (English, History and Economics)

জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভক্তের মাথার তাজ, যুগস্রষ্টা মহাপুরুষ মাওলা শাহ্ সূফী সদর উদ্দিন আহ্‌মদ চিশ্‌তী (আঃ) এঁর আবির্ভাব হয়েছিল। কাজিম উদ্দিন আহমদ – এর ঔরসে ও  ইয়ারন নেসার গর্ভে ৭ই আশ্বিন ১৩২১ বঙ্গাব্দ, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯১৪ ঈসায়ী ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলাস্থ চুনকুটিয়া গ্রামে। ৯২ বৎসর পর সেই একই তারিখে ৭ আশ্বিন ১৪১৩ বঙ্গাব্দ, ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ঈসায়ী সালে তাঁহার তিরােভাব হয়েছে।

শিক্ষাজীবনঃ ঢাকা গভর্ণমেন্ট মুসলিম হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ ঈসায়ী সালে (ইংরেজী, ইতিহাস ও অর্থনীতি) বিষয়ে গ্রাজুয়েশন লাভ করেন।

মাওলা শাহ্ সূফি সদর উদ্দিন আহ্‌মদ চিশ্‌তী (আঃ) এঁর প্রথম সন্তান ফারুক আহমেদ নাজিম এর বর্ণনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরীকালীন পাপা পায়ে হেঁটে অফিসে যাতায়াত করতেন। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাজার করে বাড়ি নিয়ে আসতেন। অতপর নিজে রান্না করে আমাদেরকে নিয়ে খাবার খেতেন। খাওয়া শেষে একটু বিশ্রাম নিয়ে পাপা কাশ্মিরী শাহ্ সাহেবের আস্তানায় অথবা কালাচান শাহ্ বাবার। রওজায় সঙ্গীদের সাথে তাঁহাদের স্তরের আলোচনায় মশগুল থাকতেন। পাপা, কাশ্মিরী শাহ্, উঁনার খাদেম, মোতালেব শাহ্ বাবা, দুলু মস্তান, হাকিম বাবুর্চিসহ আরও কেউ কেউ থাকতেন। উপাধি বাবুর্চি হলেও প্রকৃতপক্ষে তিঁনি একজন ব্যবসায়ী। তাঁরা সকলেই ওলি ও মস্তান ছিলেন। কাশ্মিরী শাহ্ সাহেবের আস্তানাটি গভীর জঙ্গলে আচ্ছাদিত ছিল। সেখানে হিংস্র জন্তু-জানোয়ারও ছিল। আস্তানায় তাঁহারা গানও শুনতেন। গায়ক ছিলেন জনৈক মোঙ্গল মিয়া। তাহার গানের একটি কলি ছিলঃ ‘‘ওম্বাই গেলাম, বোম্বাই গেলাম দ্যাশ ঘুরলাম না, সাত পোলার মা হইলাম বিয়া করলাম না।” কালাচান শাহ্ বাবার রওজায় যদি কোন দিন রাত ১০/১১ বেজে যেত তখন আম্মা হারিকেন দিয়ে আমাকে আর আমার ছোট বোন সুরাইয়াকে খুঁজতে পাঠাতেন।


ফরিদাবাদ বাড়িতে পাপার বেশ বড় এবং উঁচু একটা মশারী ছিল। মশারীর ভিতরে পাপা সারারাত দাঁড়িয়ে সালাত করতেন। কখনও কখনও সারারাত জেগে কোরান পড়তেন। ঘুমাতেন না। আল্লাহ-রসুলের ধ্যান-খেয়ালে মগ্ন থাকতেন। কোনও সময় গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠলে মনে হতো পাপা টেবিলের উপর কোরান খুলে ঘুমাচ্ছেন। তখন আমি নিঃশব্দে কোরানটা বন্ধ করতে গেলে পাপা বলতেন, বন্ধ করোনা- আমি ঘুমাইনি। তখন আমি চলে আসতাম।


পাপার মূর্শিদ কেবলা খাজা শাহ্ পীর চিশতি যখন ফরিদাবাদ বাসায় আসতেন, তখন পাপা আমাকে স্কুলে যেতে বারণ করতেন এবং সর্বক্ষণ তাঁহার খেদমতে বসিয়ে রাখতেন- কখন তাঁহার কি প্রয়োজন হয় এজন্য। যদিও তাঁহার খাদেম সাহেব সঙ্গে আসতেন। আবার নদীর ওপারে আমাদের দাদা বাড়ি চুনকুটিয়াতেও খাজা শাহ্ পীর চিশতি আসতেন এবং ৩/৪ দিন সেখানে থাকতেন। তখনও পাপা আমার স্কুলে যাওয়া বন্ধ রাখতেন এবং আমাকে আর আমার ফুপাত ভাই তুফানকে তাঁহার খেদমতে বসিয়ে রাখতেন। তিঁনি চুনকুটিয়ায় আসলে আমাদের আত্মিয়-স্বজন, প্রতিবেশি অনেকেই আসতেন তাঁহাকে দেখতে এবং তাঁহার কথা শুনতে। তাঁহার উপলক্ষে ওয়াজের আয়োজনও হতো।

পাপা চুনকুটিয়ায় আসলে আমিও তাঁহার সঙ্গে আসতাম। পাপা আস্তানায় থাকতেন আর আমি আস্তানার নিকটস্থ আমাদের বাড়িতে ঘুমাতাম। আস্তানায় পাপা একেবারে ছোট্ট একটা হাঁড়িতে চাল,ডাল,লবন কাঁচামরিচ আর দরবারে থাকা মোটা একটি পাট গাছ থেকে পাতা ছিড়ে খিচুরী রান্না করতেন। দেখে মনে হতো বুঝি একজনের খাবার হবে। কিন্তু না, আমরা বাপ-বেটা ছাড়া আরও ৬/৭ জনের সকলেই পেট ভরে খেত। কিন্তু প্রত্যেককে পাপা নিজ হাতে বেড়ে দিতেন। অন্য কারও হাতে চামচ দিতেন না। পাপার হাতের রান্না করা খাবার খুব সুস্বাদু এবং বরকতময় হতো।

মাওলা শাহ্ সূফি সদর উদ্দিন আহ্‌মদ চিশ্‌তী (আঃ) এঁর দ্বিতীয় সন্তান সারওয়ার জাহান সুরাইয়া এর বর্ণনা

১। আমার লেখার অভ্যাস নাই। তাই কি লিখবো জানি না, তবুও দুটো কথা সকলের কাছে জানাতে চাই। আমার মনে পড়ে আমি একদিন আমার বাচ্চাদের বললাম “পড়তে বস, যদি তাড়াতাড়ি পড়া শেষ করো তাহলে চকলেট দিব। বাচ্চারা তাড়াতাড়ি পড়া শেষ করল। ঘরে কোন চকলেট ছিল না সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভাবলাম পরে কিনে দিব। কিন্তু পরে আমি চকলেটের কথা ভুলেই গেছি। বাচ্চাদের চকলেট দেই নাই। কিন্তু পাপা ঠিকই মনে রেখেছেন এবং আমার ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা মনে রেখেছেন। সেইদিন বিকালের দিকে পাপা আমাকে ডেকে পকেট থেকে চকলেট বের করে বললেন “সুরাইয়া তুমি বাচ্চাদের পড়তে বলেছিলে তার বদলে ওদের চকলেট দিবে, আর তুমি ভুলে গিয়েছ।” তারপর আমাকে চকলেট গুলো দিয়ে বললেন “ওদের ডেকে চকলেট গুলো দিয়ে দাও।” আরও বললেন “বাচ্চাদের কাছে কোন ওয়াদা করলে সেটা পূরণ করবে, ভুলে যাবেনা, এতে করে মায়ের উপর বাচ্চাদের ভরসা উঠে যায়।” এরপর আমি বাচ্চাদের কাছে কোন কথা বললে বা ওয়াদা করলে সেটা মনে রেখে দ্রুত পূরণ করতাম কখনো ভুলতাম না। এতে করে আমার বাচ্চাদেরও একটা চরম বিশ্বাস সৃষ্টি হয়ে গেছে যে, যেকথা আম্মা বলেছে তাহলে সেটা অবশ্যই সঠিক কথা বলেছে। পাপা সব সময় নিজ ধ্যান সালাতে ব্যস্ত থাকতেন তারপরও আমাদের জীবনের বিশেষ সময়ে (বাড়ন্ত বয়সে) যা কিছু ভুল ত্রুটি তাঁর সামনেই ঘটেছে এবং এর থেকে মুক্ত থাকবার শিক্ষা তিনিই দিয়েছেন।

২। মাওলা ভরসাঃ ছোটবেলা থেকেই আমি পাপার কাছে কাছে থাকতে পছন্দ করতাম। বেশির ভাগ সময়ই পাপা মসজিদে মসজিদে থাকতেন, তাই যখনই তিঁনি ঘরে আসতেন আমি তাঁর কাছে কাছেই থাকতাম। তাঁর কাছে কাছে থাকতে আমার ভাল লাগতো। তাই বেশির ভাগ দিনেই আমি আর ভাইসাব তাঁর সঙ্গে ঘুমাতাম। তাই আজ বসে বসে ভাবছি তাঁর কাছাকাছি থাকার সময় কত কথাই না তিঁনি আমাদের কাছে বলতেন এবং কত কিছুই না শিখাতেন। যে কারণে আমাদের স্বভাব চরিত্র মন মানসিকতা তাঁর হাতেই গড়ে উঠেছিল (আমাদের মন মানসিকতা আমাদের আশপাশে বড় হয়ে ওঠা আমাদের অন্যান্য কাজিনদের থেকে আলাদা রকম ছিল। তার (তাঁর শিখানো বিষয় গুলোর) একটা ছোট মোটো মালা গেঁথে (আজ) নিজের মনকে তাঁর স্মরণে রাখি। আমি আর ভাইসাব (আমার বড় ভাই) তাঁর সঙ্গে বুড়িগঙ্গা নদীতে সাঁতার শিখেছি। তিঁনি আমাদের নদীতে নিয়ে যেতেন এবং আমাদের পেটের মধ্যে নিজের হাত রেখে (আমাদের সাঁতার কাটার চেষ্টা করতে বলতেন। আমরা ডুবে যেতে থাকলে পাপা হাত দিয়ে ভাসিয়ে দিতেন এইভাবে) আমাকে আর ভাইসাবকে সাঁতার শিখিয়েছেন।

৩। খুব ছোট বেলায় ১নং নবীন চন্দ্র গোস্বামী রোডের বাসায় থাকাকালীন একদিন আমি পড়তে বসেছি এমন সময় রাস্তার ধারে পানি নিতে এসে পানি ওয়ালিরা (যারা মানুষের ঘরে ঘরে পানি দেয়) ঝগড়া করতে আরম্ভ করে, এক পর্যায়ে গিয়ে ওরা একে অপরের চুল ধরে টানাটানি করতে শুরু করে। আমাদের পড়ার ঘরটা ছিল রাস্তার পাশেই, তাই ঝগড়ার শব্দ পেয়ে আমি জানালা খুলে ওদের মারামারি দেখতেছিলাম, এমন সময় পাপা দোতলা থেকে নেমে এসে (পাপা দুতলায় থাকতেন) পিছন থেকে আমাকে বললেন “জানালা বন্ধ কর, ঝগড়া কি দেখার বিষয়?” আমি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি জানালা বন্ধ করে দিলাম। এরপর জীবনে যেখানেই ঝগড়া দেখতাম তাড়াতাড়ি সরে যেতাম। পাপা কোন কথা বললে সেটা চিরদিনের জন্য মনে গেঁথে নিতাম। অনেক বছর পর বড় হয়ে সে কথার অর্থ বুঝতে পারলাম যে, সত্যিই ঝগড়া দেখাটা যে কত বড় ক্ষতিকর।

৪। ছোট বেলায় পাপার সাথে নদীতে গোসল করতে যেতাম আমি আর আমার বড় ভাই (ফারুক আহমেদ নাজিম)। প্রায়ই নদীতে যাওয়ার সময় দেখতাম ড্রেনের ময়লা সাফ করার জন্য মেথররা কাজ করতেছে। পাপা আমাদের দাঁড় করিয়ে রেখে ওদের কিছু নাস্তা কিনে দিয়ে খেতে দিতেন, আর নিজে পুরো ড্রেনটা পরিষ্কার করতেন। ড্রেনটা ছিল ফরিদাবাদ গলি থেকে বুড়ীগঙ্গা নদী পর্যন্ত। পাপা যে কোন কাজকে কখনো ছোট মনে করতেন না। সব সময় দেখেছি মানুষের সেবা করাটাই তাঁর প্রম কাজ। ঘরে বাসার কাজে সব সময় আমাদের সাথে হাত লাগাতেন এবং কোন কাজ কিভাবে করে শিখিয়ে দিতেন। আমি তাঁর কাছে পিঠা বানানো শিখেছি, মাছ কাটা শিখেছি, এমন আরও অনেক কাজ শিখেছি। আম্মার কাছে শুনেছি আম্মাকেও তিঁনি দৈনন্দিন অনেক কাজ কিভাবে করতে হয় শিখিয়েছেন। সেজন্যই আম্মার প্রতিটা কাজ খুব নিখুঁত এবং পরিষ্কার ছিল।

৫। সব সময় পাপাকে আমরা ঘরে পেতাম না। ধ্যান সাধনা করার জন্য একবার সুভাঢ্যায় ছিলেন, পরে আমিন পাড়ায়ও ছিলেন, বাইরে যখন থাকতেন তখন তিঁনি নিজ হাতে খিচুরি রান্না করে খেতেন। তাঁর হাতের খিচুরি অনেক মজা হতো। যারা তাঁর খিচুরি খেয়েছেন তারাই ভুলতেন না।

৬। আমরা যখন নীলক্ষেতে থাকি, পাপার একটা চেয়ার দরকার। তাই তিনি দোকান থেকে একটা চেয়ার কিনে বাসায় নিয়ে আসলেন। আম্মা দেখে বললেন “চেয়ারটা নিজে বয়ে না এনে একটা কুলিকে ২টা (দুইটা) টাকা দিলেই তো নিয়ে আসতো।” জবাবে পাপা বললেন “তোমার যদি কাউকে টাকা দিতে ইচ্ছা করে তাহলে কাজ করিয়ে দিতে হবে কেন, এমনিতেই দাও। চেয়ারটাতো আমি নিজেই আনতে পারি।” উনি কখনো এক গ্লাস পানিও চেয়ে খেতেন না, নিজ হাতে নিয়ে নিতেন।

৭। পাপা কখনো নিজেকে জাহির করেন নাই কাজেই আমরা তাঁকে বুঝতাম না। আম্মা আমাদেরকে জানিয়ে দিলেন। একদিন আম্মা আমাকে বললেন “তোমার যদি কোন দুঃখ থাকে বা কোন কথা থাকে, তোমার পাপাকে বলে দিও, তাহলে তোমার দুঃখ দূর হয়ে যাবে।” আমি বললাম “পাপার কাছেকিছু বলতে লজ্জা করে।” আম্মা বললেন “মনে মনে বলো তাহলেই চলবে।” পাপার সামনে বসে মনের কথা মনে মনে বললেই পাপা বুঝে যেতেন এবং জবাব দিতেন। আমি কোন একটা কাজ করব বলে মনে করছি, কিন্তু কারো কাছেই জানাইনি। হঠাৎ পাপা বললেন, এই কাজটা না করাই ভাল। তিনি কখনও কোন কথা হুকুমের সুরে বলতনে না। “এটা করা ভাল”, “এই কাজ করলে এই রকম ভালো ফল পাওয়া যায় ।” যারা সচেতন তারা এই রকম করে। ইত্যাদি বলে তাঁর পছন্দের কাজটা করার জন্য আমাদের বলতেন, কিন্তু কখনোই সরাসরি নির্দেশ সূচক শব্দ ব্যবহার করতেন না। (সারওয়ার জাহান সুরাইয়ার মুখে শোনা)

৮। দেশ স্বাধীন হবার পর জাপান থেকে কিছু কাপড় এসেছে। আম্মা খুব সুন্দর একটা কাপড় কিনে এনেছেন। আমাদের ঈদের জামা বানানোর সময় পাপা সেটা দেখে বললেন “কাপড়টা তো খুব সুন্দর!” ব্যাস আম্মা সঙ্গে সঙ্গে সেই কাপড়ের একটা লুঙ্গি বানিয়ে ফেললেন পাপার জন্য। পাপা একদিন লুঙ্গিটা পরলেন, কিন্তু পরে আর পরতে দেখা গেল না। আম্মা একদিন জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার পছন্দের সেই লুঙ্গিটা আর পরেন না কেন?” পাপা বললেন “একটা ফকির লুঙ্গি চাইল তাই নতুনটাই দিয়ে দিলাম।” আম্মার জীবনের প্রম রোজগার ছিল ২০ (বিশ) টাকা (মাষ্টারী করেছিলেন এক প্রাইভেট স্কুলে)। সেই বিশ টাকা দিয়ে পাপার জন্য একজোড়া জুতা (তখনকার দিনের দামী জুতা) কিনে দিলেন। কয়েকদিন পরার পর পাপা সেই জুতা পরে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেন, কিন্তু নামাজ শেষে বের হবার সময় আর সেই জুতাটা পাওয়া গেল না। আম্মা সব সময় চাইতেন পাপাকে ও আমাদেরকে ভাল কাপড় পড়িয়ে রাখতে কিন্তু পাপা ইচ্ছাকৃত ভাবেই বেশি সাধারণ পোশাক পরতেন। আবার কখনো কখনো পাঞ্জাবীর পিঠে বড় তালি দিয়ে পড়তেন। কাপড়ের এই তালি আমাদের হাত দিয়েও সেলাই করিয়ে নিতেন কখনো কখনো।

৯। আমরা তখন খুব ছোট, পাপা কোরবানী দিবেন তাই একটা ছাগল কিনে আনলেন। আমরা খুব খুশী হলাম, ভাবলাম মাংস খাব। কিন্তু কোরবানী করার পর পাপা সব মাংস ফকিরকে দিয়ে দিলেন। শুধু আমরা এক বেলায় যে পরিমান মাংস খাই সেই পরিমান মাংস হাড়িতে রেখে দিলেন। সেটা রান্না করে আমাদের খেতে দেয়া হল। পাপাকে জীবনে একবারই পশু কোরবানী করতে দেখেছি। এরপর আর তিনি কোন পশু কোরবানী করেন নাই।

১০। “পাপা, আমি এখনও ঘুমাই নাই” ১ নং নবীন চন্দ্র গোস্বামী রোডের বাসায় থাকাকালীন পাপা সিঁড়ি দিয়ে দুতলায় উঠেই যে ঘরটা সেই ঘরে থাকতেন। সেই ঘরের অপর পাশের দরজা দিয়ে ছাদে যাওয়া যেতো। পাপার বিছানায় একটা জাজিমের তোষক (নারিকেলের ছোবার তৈরী) ছিল। পাপা রাতে মশারীর ভিতর দাড়িয়ে নামাজ পড়তেন (আম্মা অনেক উঁচু মশারী বানিয়ে দিয়েছিলেন)। আমি পাপার সঙ্গে ঘুমাতে পছন্দ করতাম, তাই পাপার সঙ্গে ঘুমাতাম। আমি ঘুমিয়ে গেলে পাপা কোলে করে আমাকে আম্মার বিছানায় দিয়ে আসতেন। কিন্তু আমি সেটা চাইতাম না। একদিন পাপা আমাকে কোলে নিয়ে মশারীর দরজা ফাক করে (পাপার মশারীতে দরজার মত ব্যবস্থা ছিল) বের হচ্ছেন আর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। আমি বলে উঠলাম “পাপা, আমি এখনও ঘুমাই নাই।” পাপা হেসে আমাকে আবার বিছানায় শোয়ায়ে দিলেন। সেদিন আর নিচের তলায় আম্মার কাছে দিয়ে আসেন নাই।

১১। “একবার আমি আর আম্মা মিলে পাপার জন্য একটা মশারী বানালাম” পাপা মশারীর ভিতর দাঁড়িয়ে প্রায় সারা রাতই নামাজ পড়তেন। এইজন্য আম্মা খুব উঁচু একটা মশারী বানালেন। বানাবার সময় আমি মেশিনের যে অংশে সেলাই হচ্ছে সেই অংশের কাপড়টা টেনে ধরে রাখতাম যেন সুন্দরভাবে সেলাই হয়। শিশু আমি মনে করলাম যে আমিও মশারী সেলাই করেছি, আসলে কাপড় টেনে ধরে রাখা ছাড়া আর কিছুই আমি করি নাই। সেই মশারীর একটা জায়গায় ডাবল কাপড় ছিল, সেই অংশটা দরজার মত ব্যবহার করতেন। সেখান দিয়েই মশারীর ভিতর যাওয়া আসা করতেন।

১২। আমাদের ছোটবেলায় পাপা একা একা বিভিন্ন গান করতেন। সেই গান গুলোর কিছু কিছু এখনও মনে আছে। ………

bn_BDবাংলা

প্রধান মেনু